ব্যাকস্পেস

পৃথিবীতে প্রত্যেকটা মানুষের কাছেই সবচেয়ে সুন্দর তার ভালোবাসার মানুষ । সে মানুষটি যে কেউ হতে পারে । হতে পারে তার মা কিংবা বাবা কিংবা তার অন্যকোন এক অজানা প্রতিবেশি ।

সে মানুষটি কালো কি সাদা, মোটা নাকি চিকন, চোখ দুটো কচ্ছপ নাকি হরিণের মতোন, নাক দুটো সরু নাকি চেপ্টা এটা তার কাছে কোন ব্যপার না ।

অনুভূতি গুলোই ফ্যাক্ট । ভালোবাসা যেমন স্বচ্ছ প্রতিটি প্রেমিকের কাছে ,মানুষের মন ঠিক ততটাই ধূসর । আজ এটা ভালো লাগে তো কাল ঐ টা । আজ কালো রঙয়ের চুলের কাউকে ভালো লাগে তো কাল বাদামী রঙয়ের ।

অর্ণব নীলা কে প্রচন্ড ভালোবাসত । নীলার দূরন্তপনা , কথা বলার ধরন, দাঁত আর হাসি । দাঁত কিংবা হাসি ভালো লাগার কোন কারন নেই আর এগুলো ভালো লাগার মতোন ও কিছু না । তারপরও কখন কি ভালো লেগে যায় ,কি কারণে ভালো লাগে এটা সে নিজেও জানে না আর এটাই হইতো ভালোবাসা ।

আর এই ভালোবাসা গুলো বড্ড বেহায়া আর সাহসী। হাজার ঝগড়াতেও না দেখে থাকা যায় না, ঠিক বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে ।

অনেকটা ঠিক ভালো লাগার গানের মতোন ।ভালো লাগা গানটা যেমন প্লে লিস্টে বারবার বাজতেই থাকে বাজতেই থাকে আর ঠোঁটের কোনায় ফিসফিস করে তাল তোলে শত টেনশানেও । ঘুমুতে যাওয়ার আগে কানে ইয়ারফোন না ঠুকলে যেমন ঘুম আসে না, মিসিং মিসিং মনে হয় ঠিক তেমনি প্রেমিকার মুখে শোনা আই লাভ ইউ না শুনলে অর্ণবের ঘুমই আসে না ,কিছু একটা বাকি রয়ে গেছে ,বাকি রয়ে গেছে মনে হয় আর মনে হয় নীলা একদমই আমাকে আর ভালোবাসে না । এই বেহায়াপনা গুলোই ভালবাসাটাকে আরো শক্ত আর মজবুত করে তোলে ।

কিন্তু কখন যে ভালোলাগার সেই গানটা শুনতে শুনতে বিরক্তির পর্যায়ে চলে যায় আমরা টেরই পাই না । হয়তো একঘেয়েমিতে ডিলিট করে দেই কিন্তু পরক্ষনেই যখন বুঝতে পারি ভুল হয়ে গেছে তখন শত চেষ্টায় ও এটাকে আনডো বা রিস্টোর করে আনতে পারি না, কোন কোন টা হয়তো ব্যাক আসে কিন্তু ফাটল ধরার মতো ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়ে । শত হোক মোবাইলের গান তো আর ভালোবাসা না । ভালোবাসার মতোন আর ভালোবাসা দুটো এক জিনিস না ।

নীলা অর্ণবের কাছে ভালোবাসার মতোন কিছু ছিলো না , ভালোবাসা ছিলো । দীর্ঘ ৭ বছরের ভালোবাসা । যে ভালোবাসা শীতের তীব্র ঠান্ডায় ঠোঁটে উষ্ণতা জাগাতো আর খালি শরীরে চাদর হয়ে জড়িয়ে থাকতো ।

নীলার লেখাপড়া প্রায় শেষ , ২৪ এর গণ্ডি ছোঁয় ছোঁয় । বাবা মার কাছে যেন দায় হয়ে পড়েছে নীলা । ভালো পাত্র দেখে বিয়ে দিতে পারলেই যেন মুক্তি ।

আর ঐদিকে অর্ণব সবেমাত্র এম বি এ তে এডমিশন নিয়েছে । পরিবারের সমস্ত বোঝা তার ঘাড়ে কিন্তু এখনো কোন জব ম্যানেজড হয়ে উঠছে না আর যাও পাচ্ছে পোষানোর মতোন না ।

  • আজ আমাকে দেখতে আসবে ।
  • দেখা করো না ।
  • কি করবো ? আমি আর কত বলবো পরে পরে !
  • আমি কি করবো । আমার আর ভালো লাগে না । নিজের পড়ার খরচ ই দিতে পারছি না , কোন মতে মেসের খরচ দিচ্ছি টিউশনি করে এ অবস্থায় তোমার বাবা মেনে নিবে আমাকে ?
  • না নিবে না ।
  • তাহলে ? পালাবে ?
  • নাহ । প্রেমের আগে মনে ছিলো না ? তোমরা ছেলের জাত এমনি ! প্রেম করার সময় ঠিক ই করতে পারো । যত্তোসব । আমি আজ রাজি হয়ে যাব । আজকের ভিতর জব মেনেজড করে আসতে পারলে আসো তা না হলে ভালো থেকো , আর দেখা হবে না ।
  • বুঝার চেষ্টা করো প্লিজ । জবের জন্য কি আমি কম চেষ্টা করছি !
  • প্লিজ ! স্টপ । আর কিছু শুনতে চাই না । রাত ১০ টা পর্যন্ত টাইম দিলাম ।
  • আরে শুনো…।টুট টুট টুট…

ঘড়ির কাটায় রাত ১০.৩১ । মোবাইলে একটাও মিসকলড বা মেসেজ নেই । যে মেয়েটা সারাদিন ফোন দিত সে আজ একটাও ফোন দেয় নি !

এ মুহূর্তে যোগাযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না , আপনি কিছুক্ষণ পর আবার ডায়াল করুন ।

এভাবেই নির্ঘুম সারাটা রাত কেটে গেলো অর্ণবের । সকালে ঘুম ভাঙল নীলার ফোনে ।

  • জব পেয়েছ ?
  • তোমার ফোন অফ ছিল কেন ? আমি সারারাত ট্রাই করেছি
  • জব পেয়েছ ?
  • না চেষ্টা করছি ।
  • আর চেষ্টা করা লাগবে না, ছেলেকে আমার ফ্যামেলি পছন্দ করেছে । আমারও একবারে খারাপ লাগে নি এটলিস্ট তোমার থেকে বেটার ।
  • প্লিজ এমন বলো কেন ?
  • যা বলছি সবই সত্য । নাম্বার টা চেঞ্জ করে ফেলবো আর বিয়ের পর ছেলে নাকি অস্ট্রেলিয়া নিয়ে যাবে । তুমি ভালো থেকো আর নিজের প্রতি খেয়াল নিও ।
  • তোমার এসব ফাইজলামী একদমই ভালো লাগে না … মাঝেমধ্যে বিরক্ত লাগে… যাও করে ফেলো বিয়ে যা ইচ্ছা তাই করো …

নাম্বারটা সত্যিই বন্ধ । বাসার সামনে গেলাম বাসায় কেউ নেই, পাশের দোকানদারককে জিজ্ঞেস করলাম জানে না,এমনকি কোন ফ্রেন্ড ও না । কি ব্যাপার…ফ্যামিলি সহ কোথায় যাবে ! ৪ – ৫ দিন এভাবেই গেলো ।

জবের জন্য ঘুড়ছি দ্বারে দ্বারে ,কোন এক ভাইবাই অপেক্ষা রত অবস্থায় ফোন বেজে উঠলো ,মোবাইলটা সাইলেন্ট ছিলো না তাই তড়িঘড়ি করে সাইলেন্ট করতে গিয়ে দেখি নীলার ফোন ।

  • হ্যালো নীলা
  • তুই কই ? তোর মেসে এসে বসে আছি ১ ঘন্টা যাবত আর তোর ফ্রেন্ডগুলা রুচি চানাচুর ছাড়া আর কিছুই খাইতে দেয় নাই ।
  • তুমি ভেগে চলে আসছ ?
  • তুই কি গাধা নাকি ! মেয়ের বাপ রাজি হইলে কি কখনো মেয়ে ভাইজ্ঞা চলে আসে ?
  • মানে ?
  • মানে কিছু না , এজন্যই তুই জব পাস না এখন বুঝছি
  • আমি তো ইন্টারভিউতেই ছিলাম…।
  • হাজারটা দিলেও তোর টা হবে না । কারো কপাল খুলে বিয়ের আগে আর কারোর টা পরে…। আর কারোর টা বিয়ের কথা শুনলে । ব্যাপার টা বুঝতে হবে ।
  • জামাইকে তুই করে বলো কেন ? ঠিক না, সম্মান দিয়ে কথা বলো
  • তুই করেই বলবো । তোর সমস্যা ?
  • তোরে বিয়ে করব নাহ…। তুমি করে না বললে !
  • ওগো লক্ষীটি আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি প্লিজ চলে এসো একটিবার
  • চাকরী না পেলে আমি বিয়ে করব না এই বলে দিলুম লক্ষ্মীটি

তুমি আরেকটা ঝাল চানাচুর খাও

টুট … টুট… টুট

অর্ণব কে ? অর্ণব ! ভিতরে যান ,স্যার ডাকছে …

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান